শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৬ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
‌‌সম্প্রীতি সমাবেশ। কালের খবর সড়ক ও জনপদের ৩য় শ্রেণির কর্মকর্তার সম্পদের পাহাড়। কালের খবর  পেশাদার সাংবাদিকদের সবরকম সুরক্ষা দিতে কাজ করছে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার : এম আব্দুল্লাহ। কালের খবর সরকারি রাস্তা উদ্ধারের দাবিতে শাহজাদপুরে মানববন্ধন। কালের খবর ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ককে সুদৃঢ় করতে হবে : ইউএনও মনজুর আলম। কালের খবর মাটিরাঙ্গায় সেনাবাহিনীর মানবিক সহায়তা বিতরণ ও চিকিৎসা সেবা প্রদান। কালের খবর ‘দেশ স্বাধীনের পর তৈরি সংবিধানে কোনো জাতির পিতা ছিল না’ : আদালতকে অ্যাটর্নি জেনারেল। কালের খবর দ্রব্যমূল্যের এই বাজারে খরচ কমানোর ২৭ উপায়!। কালের খবর ওলামাদের মধ্যে রুহানী ঐক্য প্রয়োজন : জামায়াত আমির। কালের খবর আ.লীগ নেতা সুমন খান গ্রেফতার। কালের খবর
►সরকারি চাকরি ►বিশ্ববিদ্যালয় ►ড্রাইভিং মাদকসেবী ছড়িয়ে পড়ছে ডোপ টেস্টের অভাবে। কালের খবর

►সরকারি চাকরি ►বিশ্ববিদ্যালয় ►ড্রাইভিং মাদকসেবী ছড়িয়ে পড়ছে ডোপ টেস্টের অভাবে। কালের খবর

কালের খবর প্রতিবেদক :

দেশে মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান অত্যন্ত কার্যকরভাবে চললেও মাদকাসক্তদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রমে গতি নেই। ডোপ টেস্ট বা পরীক্ষা পুরোপুরি চালু না করায় সরকারি চাকরিসহ বিভিন্ন পেশায় থাকা মাদকাসক্তরা শনাক্ত হচ্ছে না।

মাদকাসক্তরা সহজে চাকরিতেও ঢুকে পড়ছে। যদিও নতুন মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে সন্দেহভাজন সবাইকে ডোপ টেস্ট করা যাবে—এমন বিধান করা হয়েছে। সরকারি চাকরিতে নিয়োগের সময় ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু এসব বাস্তবায়নের উদ্যোগ চলছে ঢিমেতালে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে চালু করা হয়নি ডোপ টেস্ট। ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার সময় এই পরীক্ষা চালুর উদ্যোগও নেই। এসব কাজে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) সক্ষমতা বাড়ানোর প্রকল্প এখনো অনুমোদনের অপেক্ষায় ঝুলছে। কিভাবে ডোপ টেস্ট করা হবে সেই বিধিমালা তৈরির খসড়াই হয়নি এখনো। এসব কারণে মাদকের চাহিদা ও ঝুঁঁকির পরিমাণ কমছে না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে গড়ে তুলতে অভিযানের মাধ্যমে জোগান কমাতে হবে। একই সঙ্গে চাহিদা ও ঝুঁকি না কমানো গেলে ভালো ফল আসবে না। আর এ লক্ষ্যে মাদকাসক্তদের শনাক্ত করতে হবে। মাদকাসক্তদের চাকরিতে নিয়োগ, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি, গাড়ি চালনার লাইসেন্স—এ রকম বিভিন্ন সুবিধা থেকে বাদ দিয়ে আইনের আওতায় আনা হলে মাদকের প্রতি সবার ভয় জন্ম নেবে। এতে মাদকের চাহিদাও কমবে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ডিএনসিসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর ল্যাবে ডোপ টেস্ট ও মধ্যম মানের পরীক্ষা করার ব্যবস্থা থাকলেও চূড়ান্তভাবে শনাক্তকরণের উপকরণ ও ব্যবস্থা নেই। নেই প্রয়োজনীয় লোকবলও।

পুলিশ ও ডিএনসিসহ কয়েকটি সংস্থায় নিয়োগের ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট সীমিতভাবে কার্যকর করলেও শনাক্ত হওয়া চাকরিপ্রার্থীকে আইনের নির্দেশনামতো নিরাময়কেন্দ্র বা জেলে পাঠাচ্ছে না। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তির সময় বা সন্দেহ হলে ডোপ টেস্ট করার ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে পারেনি প্রশাসন। দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বলছেন, বিধিমালা চূড়ান্ত এবং সক্ষমতা বাড়ানো গেলে পর্যায়ক্রমে ডোপ টেস্ট কার্যক্রমটি বাস্তবায়ন করা হবে।

গত বছর জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানের ঘোষণা দেন। এরপর ৪ মে থেকে র‌্যাব বিশেষ অভিযান শুরু করে। ১৮ মে থেকে পুলিশ এ অভিযান জোরদার করে। গত এক বছরে প্রায় সোয়া লাখ মামলায় দেড় লাখ মাদক কারবারি ও মাদকাসক্ত গ্রেপ্তার হয়েছে। অভিযানে তিন শতাধিক মাদক কারবারি নিহত হয়েছে। ধারাবাহিক অভিযানে কোণঠাসা হয়ে পড়া ইয়াবা কারবারিরা এখন আত্মসমর্পণের জন্য পুলিশের কাছে আসছে।

ডিএনসির মহাপরিচালক মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে মাদকাসক্তদের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও বিভিন্ন সংস্থার তথ্যে ৭০-৭৫ লাখ বলা হয়। এর মধ্যে ৫০ লাখের মতো ইয়াবায় আসক্ত। তাই মাদক প্রতিরোধে এদের শনাক্ত করে চিকিৎসার আওতায় আনা এবং নতুন মাদকসেবী তৈরি হতে না দেওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ জন্যই ডোপ টেস্ট আইন কার্যকর করার চেষ্টা চলছে।

গত ২৫ ডিসেম্বর থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ কার্যকর হয়। এ আইনের ২৪-এর উপধারা ৪-এ বলা হয়েছে, মাদকাসক্ত ব্যক্তি শনাক্ত করবার প্রয়োজনে বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে ডোপ টেস্ট করা যাবে। ডোপ টেস্ট পজিটিভ হলে ধারা ৩৬(৪) অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। ৩৬ ধারার ৪ উপধারায় বলা আছে, ‘কোনো ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি মাদক সেবন ছাড়া অন্য কোনো ধরনের মাদক অপরাধী হিসেবে প্রতীয়মান না হন, তাহলে আদালত তাঁকে মাদকাসক্ত ব্যক্তি বিবেচনা করে যেকোনো মাদকাসক্তি চিকিৎসা কেন্দ্রে তাঁর নিজস্ব অথবা পরিবারের ব্যয়ে চিকিৎসার জন্য পাঠাবেন। ’ আইনে আরো বলা হয়েছে, ওই মাদকাসক্ত ব্যক্তি যদি মাদকাসক্তি নিরাময়ের চিকিৎসা নিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন, তবে তিনি অন্যূন ছয় মাস, অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

ডিএনসির সাবেক মহাপরিচালক বজলুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, বিশ্বব্যাপী মাদকবিরোধী কাজ হয় তিন ভাগে। এগুলো হলো জোগান হ্রাস, চাহিদা হ্রাস ও ঝুঁকি হ্রাস। এখন কঠোর অভিযানের মাধ্যমে জোগান বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। তবে একই সঙ্গে চাহিদা ও ঝুঁকি হ্রাস নিয়ে কাজ করতে হবে। তা না হলে নতুন মাদকাসক্ত তৈরি হবে। মাদকাসক্ত গোপনে ধুঁকে বিপথে যাবে। চাহিদা থাকলে মাদকের গোপন কারবার কমানো বা থামানো কঠিন হবে। তাই মাদকাসক্তদের শনাক্ত করতে হবে। তিনি আরো বলেন, মাদকাসক্ত হলে পরীক্ষায় যদি ধরা পড়ে তাহলে একটি ভয় থাকবে। তাই ডোপ টেস্ট চালু করা প্রয়োজন। মাদকাসক্ত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া যাবে না। চাকরি পাওয়া যাবে না। চাকরি হারাতে হবে। বাধ্যতামূলক জেলে বা নিরাময়কেন্দ্রে চলে যেতে হবে। এসব চিন্তা সচেতনতা তৈরি করবে। এখন আইন হয়েছে। দরকার বাস্তবায়ন।

ডিএনসির সাবেক অতিরিক্ত পরিচালক আবু তালেব ১৯৯০ সালের মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন এবং বর্তমান আইনের খসড়া প্রণয়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। মাদকবিষয়ক বেশ কয়েকটি গবেষণামূলক বইয়ের লেখক তিনি। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই ডোপ টেস্টের বিষয়টি আইনে আনার চেষ্টা করা হচ্ছিল। এর কারণ হলো মাদকাসক্ত ব্যক্তি যেন চিহ্নিত হয়। উন্নত বিশ্বে ডোপ টেস্টের মাধ্যমে সন্দেহভাজনকে পরীক্ষা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, সরকারি-বেসরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা, ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ কিছু কাজে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা উচিত। এরই মধ্যে সরকারি চাকরিতে ডোপ টেস্ট করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এসব বিষয় বাস্তবায়নের সক্ষমতা নেই ডিএনসিসহ সব প্রশাসনের। ’

ডিএনসির পরিচালক (চিকিৎসা ও পুনর্বাসন) এস এম জাকির হোসেন বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে শুধু চাকরির জন্য নয়, সন্দেহ হলে কর্মকর্তাদের পরীক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহণ ও নবায়নে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার বিষয়টি পরিকল্পনায় আছে। আইনে ডোপ টেস্টের জন্য বয়স, স্থান বা কোনো সীমারেখা নেই। পরীক্ষা করে ব্যবস্থা নেওয়া গেলে সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরি হবে যে মাদক নিয়ে গোপনে আর থাকা যাবে না। ফলে মাদকাসক্তি কমবে বলে আমরা মনে করি। ’

সূত্র মতে, যানবাহনের চালকদের ডোপ টেস্ট করার ব্যাপারে চিন্তা করা হলেও সে জন্য এখনো কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। এ ব্যাপারে পুলিশকে ডোপ টেস্টের সরঞ্জাম সরবরাহ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কারণ পুলিশই সব সময় রাস্তায় চেকপোস্ট পরিচালনা করে।

সরকারি চাকরিতে বাধ্যতামূলক, কার্যকর হয়নি

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের নভেম্বরে মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম তাঁর অধীন পুলিশ সদস্যদের ডোপ টেস্ট করে পাঁচজনের মাদক সেবনের প্রমাণ পান। ওই সময় দিনাজপুরের পুলিশ সুপার হামিদুল আলমও পুলিশসহ কয়েকজনের ডোপ টেস্ট করিয়ে পজিটিভ রেজাল্ট পান। এর আগে গোয়েন্দা তথ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক চিকির‌্যাক মাদক সেবন করেন বলে উঠে আসে। গত বছরের শুরুতে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) নিয়োগের সময় ডোপ টেস্ট পরীক্ষায় ১৮ জন পজিটিভ বলে ধরা পড়ে। এমন অবস্থায় ফেব্রুয়ারি মাসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সব চাকরিতে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করতে জনপ্রশাসন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। এতে বলা হয়, সরকারি চাকরিতে ঢোকার আগে প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট বা মাদক পরীক্ষা করতে হবে। যাঁর পরীক্ষার ফল ইতিবাচক হবে, তিনি চাকরির জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে তাঁদেরও পরীক্ষা করা হবে।

তবে এই আদেশের পরও কার্যকর হয়নি ডোপ টেস্ট ব্যবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে গত ৫ জুলাই হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা শাহিন আরা লাইলী। এরপর ৫ নভেম্বর হাইকোর্ট চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে ‘ডোপ টেস্ট’ কেন বাধ্যতামূলক করা হবে না জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। মন্ত্রিপরিষদসচিব, আইনসচিব, স্বাস্থ্যসচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

এ অবস্থায় গত বছরের ৫ ডিসেম্বর সব শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ‘ডোপ টেস্ট’ বাধ্যতামূলক করার নির্দেশনা দিয়ে পরিপত্র জারি করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত পরিপত্রে বলা হয়, সব শ্রেণির সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময় বিদ্যমান অন্যান্য ব্যবস্থার সঙ্গে ডোপ টেস্ট অন্তর্ভুক্ত করে এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে প্রতিবেদন পরিচালকের (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) কাছে পাঠাতে হবে।

কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থাগুলো ছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠানে ডোপ টেস্ট নিশ্চিত করা হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিপত্রে কোথায় ডোপ টেস্ট করাতে হবে সেই নির্দেশনা নেই। তবে তাদের কাছে রিপোর্ট দিতে হবে, এটা বলা হয়েছে। লিডিং সংস্থা হিসেবে ডিএনসির ল্যাব বা ব্যবস্থাপনায় এই পরীক্ষা করানোর নির্দেশনা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. আবুল কালাম আজাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পরিপত্র জারির পরে তেমন নিয়োগপ্রক্রিয়া হয়নি। নিয়োগপ্রক্রিয়া হলে ডোপ টেস্ট কার্যকর করার জন্য সিভিল সার্জনদের বলা হয়েছে। ’

ডিএনসির পরিচালক (চিকিৎসা ও পুনর্বাসন) এস এম জাকির হোসেন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ব্যাপারে পরীক্ষার সহায়তা চাওয়া হয়নি। চাকরির স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ দেন সিভিল সার্জন। মূলত সিভিল সার্জনের কাছে যে স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাগজ যায় সেটির একটি থাকবে ডোপ টেস্ট। এটি আমরা যেন করে দিতে পারি সে লক্ষ্যে কাজ চলছে। ’

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, গত এক বছরে মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে শতাধিক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে এর মধ্যে কতজন মাদকাসক্ত ছিল সে পরিসংখ্যান নেই। জানতে চাইলে সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, পুলিশে নিয়োগপ্রক্রিয়ায় ডোপ টেস্ট আগেই কার্যকর করা হয়েছে।

ডিএনসির এক কর্মকর্তা বলেন, গত বছর অভিযোগ ওঠায় অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ডোপ টেস্ট করানো হয়। তবে সেই পরীক্ষায় রহস্যজনকভাবে কোনো পজিটিভ পাওয়া যায়নি। অভিযুক্তরা কারসাজি করেছেন বলে ধারণা থেকে তাঁদের অন্য অভিযোগে শাস্তি দেওয়া হয়।

হয়নি বিধিমালা, নেই সক্ষমতাও

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, মাদক আইনে বলা অন্য কয়েকটি বিধির খসড়া তৈরি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও ডোপ টেস্টের বিধিমালার খসড়াই এখনো চূড়ান্ত হয়নি। খসড়ার আগে সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য একটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে মন্ত্রণালয়। জানতে চাইলে ডিএনসির পরিচালক এস এম জাকির হোসেন বলেন, ‘শিগগিরই আমরা ডোপ টেস্ট বিধিমালার খসড়া তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। পরীক্ষার সক্ষমতার জন্য একটি প্রকল্পের প্রস্তাব গত ১৬ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আন্ত মন্ত্রণালয় সভায় এটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। যন্ত্রপাতি, কিটস, বায়োকেমিস্টসহ অনেক কিছুই প্রয়োজন। আমাদের অফিস, রাসায়নিক ল্যাব ও নিরাময়কেন্দ্রেই এই সেবা নিশ্চিত করা যাবে। ’ তিনি আরো বলেন, ‘তিনটি ভাগে ডোপ টেস্ট করা হয়। ভ্রাম্যমাণ বা রাস্তায় স্ক্রিনিং—এটি গাড়িচালক ও সন্দেহভাজনদের করা যাবে। এই পরীক্ষার সামর্থ্য আছে আমাদের। অন্যটি হলো ইউরিন পরীক্ষা। এটি অফিসে এনে বা চিকিৎসাকেন্দ্রে করা যাবে। তৃতীয়টি হচ্ছে কনফারমেটিভ বা চূড়ান্ত শনাক্ত করা। এর উপকরণ ও কেমিস্ট আমাদের নেই। ’ তিনি জানান, অল্প সময়ে ডায়বেটিস পরীক্ষার মতোই ডোপ টেস্ট করার ব্যবস্থা ডিএনসিতে আছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট ফি দিয়ে এই পরীক্ষা করাতে পারবে।

সূত্র জানায়, গত বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত সারা দেশের ২৮ হাজার ১৪২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদকবিরোধী কমিটি গঠন করেছে ডিএনসি। এসব প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে ডোপ টেস্ট বাস্তবায়ন করতে চায় সংস্থাটি। পরীক্ষায় কারো শরীরে মাদকের উপস্থিতির প্রমাণ পেলে বাধ্যতামূলকভাবে ওই শিক্ষার্থীকে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ছয় মাসের চিকিৎসা নিতে পাঠানো হবে।

বিভিন্ন দেশে স্কুলে ড্রাগ টেস্টিং উদ্দেশ্য শাস্তি নয়

ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মাদকের ছোবলে ধ্বংস হোক, তা কেউ চায় না। তাই কিশোর বয়স থেকেই তাদের ওপর নজর রাখার চর্চা রয়েছে বিভিন্ন দেশে। স্কুল-কলেজভিত্তিক মাদকাসক্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে। দৈবচয়নের ভিত্তিতে এ পরীক্ষা চালানো হয়। তবে শিক্ষার্থীদের শাস্তি দেওয়া বা বহিষ্কার করা এ ধরনের পরীক্ষার উদ্দেশ্য নয়। কিশোর বয়সে মাদকে আসক্তির ঝুঁকি কমানো, সতর্কতা বাড়ানো এবং আসক্তি শনাক্ত হলে সংশোধনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যেই এই ব্যবস্থা রয়েছে।

ফিলিপাইনে শিক্ষার্থীদের মাদকাসক্তি পরীক্ষা হয় দৈবচয়নের ভিত্তিতে। সে দেশে ২০০৫ সালে প্রতি ১৭টি স্কুল থেকে ৩০ জনকে নিয়ে মোট ২৯ হাজার শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা করে ৭২ জনের (১ শতাংশের কম) নমুনায় মাদকের উপস্থিতি পাওয়া যায়। মাদকের বিস্তার রোধে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট তাগিদ দেওয়ার পর সে দেশেও পরীক্ষামূলকভাবে স্কুলভিত্তিক মাদকাসক্তি নির্ণয়ের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের হিসাবে দেশটির ২৫ শতাংশ মিডল ও হাই স্কুল ডিস্ট্রিক্টে র‌্যানডম স্কুল ড্রাগ টেস্টিং (আরএসডিটি) নীতিমালা আছে। অ্যাথলেট বা এ রকম বিশেষ দলভুক্ত শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এ হার ৫৬ শতাংশ। ২০০৪ সালে যুক্তরাজ্যে এবং ২০০৮ সালে সুইডেনের কয়েকটি বেসরকারি স্কুল নিজেদের উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের ড্রাগ টেস্টিং শুরু করে। এখন এই দুই দেশ ছাড়াও বেলজিয়াম, হাঙ্গেরি, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, চেক রিপাবলিকে নিয়মিত স্কুলভিত্তিক মাদক পরীক্ষা করা হয় বলে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার দু-একটি স্কুলে এ রকম উদ্যোগ নেওয়া হলেও দেশটির মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ মতামত জানায়, স্কুল পর্যায়ে ড্রাগ টেস্টিং দরকার নেই। স্কুলে এ ধরনের মাদক পরীক্ষার পক্ষে-বিপক্ষে মতামত যুক্তরাষ্ট্রেও আছে। তবু গবেষকরা বলেছেন, মাদকের অপব্যবহারের বিস্তৃতি রোধে স্কুলে নিয়মিত এ ধরনের পরীক্ষা প্রয়োজন।

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com